দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবন
Md Hammim Islam Joy 10/28/2024 No Comments
দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবন
উত্তরের প্রকৃতির মোহনীয় সৌন্দর্যের এক নিদর্শন হলো দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবন। এটি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় অবস্থিত এবং উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বনভূমি হিসেবে পরিচিত। এক সময়ে এখানে বাঘ, ভাল্লুক, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণ ছিল, যা বর্তমানে অনেকটাই বিলুপ্ত। তবে এই বনাঞ্চল এখনও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য দিয়ে পর্যটকদের মনোরঞ্জন করতে সক্ষম।
ধর্মপুর শালবনের বর্তমান পরিস্থিতি
এই বিশাল বনাঞ্চল এখন ভূমি দস্যুদের দখলে চলে গেছে, এবং অবৈধভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে বনের জীববৈচিত্র্য দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। বনভূমির এ ধরনের ধ্বংস প্রতিরোধে, এই বনকে জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার দাবি উঠেছে, যা এলাকাবাসী এবং পরিবেশবিদদের নিকট জরুরি এক বিষয়।
ধর্মপুর শালবনের ভূগোল এবং আকার
ধর্মপুর শালবন ২১টি মৌজা জুড়ে প্রায় ২,৭৩০ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বনভূমি হিসেবে এটি পরিচিত। শালগাছের বৈচিত্র্য এবং অন্যান্য প্রজাতির গাছের উপস্থিতি বনকে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জামরুল, শিমুল, সেগুনসহ আরও অনেক প্রজাতির বৃক্ষ।
শালগাছের বৈশিষ্ট্য
শালগাছের মাঝারি আকারের গাঢ় সবুজ পাতাগুলি বনের চারপাশে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বনভূমিতে চলাচলের জন্য আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা রয়েছে, যা দিয়ে মানুষ বনভূমির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। এই পথ ধরে যতই গভীরে প্রবেশ করা যায়, শালগাছের সারি আরও ঘন হয়ে আসে।
বনের জীববৈচিত্র্য
একসময় ধর্মপুর শালবন ছিল বাঘ, নীলগাই, ভাল্লুক, এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত। তবুও, এখনো বনে বনবিড়াল, খেকশিয়াল, এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। ঘুঘু পাখির সুরেলা ডাক বনটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। এছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীও বনে দেখা যায়।
বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
ধর্মপুর শালবন শুধু পর্যটকদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার অন্যতম অংশ। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে এই বন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। বনভূমির অনেক জমি বর্তমানে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং বনাঞ্চলের গাছ কেটে নেয়া হচ্ছে। এজন্য বনটি জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার দাবি উঠেছে, যাতে এর জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা যায় এবং বনভূমি রক্ষা করা যায়।
জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার প্রস্তাব
সরকার ইতিমধ্যেই ধর্মপুর শালবনকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্থানীয় ফরেস্টার সাদেকুর রহমান জানান, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বন সংরক্ষণে জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়বে এবং বনবিভাগের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্কের মাধ্যমে বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়দের দৃষ্টি
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন সারোয়ার জানান, বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে এই বনের প্রকৃতি নতুনভাবে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ফুল, গাছ, পাখি সব মিলিয়ে বনভূমি ফিরে পেয়েছে তার হারানো সৌন্দর্য। তিনি বলেন, বনটিকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করলে এলাকার মানুষ যেমন কর্মসংস্থান পাবে, তেমনি সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ
ধর্মপুর শালবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। আঁকাবাঁকা রাস্তা, শালগাছের সারি, এবং বিভিন্ন ধরনের গাছপালা বনের অভ্যন্তরে এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। পর্যটকরা এখানে এসে প্রকৃতির অনন্য পরিবেশে শান্তি খুঁজে পান।
ধর্মপুর শালবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য
শুধু শালগাছই নয়, ধর্মপুর শালবনে আরও অনেক প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জামরুল, শিমুল, সেগুন, গামার, আকাশমনি, খেঁজুর ইত্যাদি। এছাড়াও এখানে বিরল প্রজাতির গাছ এবং লতা-গুল্মের উপস্থিতি দেখা যায়।
জলপ্রবাহ এবং প্রাচীন গাছপালা
বনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ নোনা নদী। নদীর পাড়ে দেখা যায় প্রাচীন পত্রঝরা শালগাছ। এই নদী এবং প্রাচীন গাছপালাগুলো বনভূমির ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এই সবকিছু মিলিয়ে বনটি তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে ধারণ করে আছে।
বন সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার বনটিকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার ফলে, বনের চারপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারবে। বনবিভাগের সঙ্গে জনসাধারণের সুসম্পর্ক বজায় রেখে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপসংহার
ধর্মপুর শালবন শুধু একটি প্রাকৃতিক বনভূমি নয়, এটি উত্তরাঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বনটি জাতীয় উদ্যানে পরিণত হলে বনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং পর্যটন খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তাই এটি সংরক্ষণ ও জাতীয় উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
FAQs
১. ধর্মপুর শালবনের বিশেষত্ব কী?
ধর্মপুর শালবন উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বনভূমি, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং জীববৈচিত্র্য রয়েছে। একসময় এখানে বাঘ, নীলগাইসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ছিল।
২. বনের জীববৈচিত্র্য কেন হুমকির মুখে?
বনভূমির জমি ভূমি দস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে এবং গাছ কাটা হচ্ছে, যা বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।
৩. কেন ধর্মপুর শালবনকে জাতীয় উদ্যানে পরিণত করা দরকার?
এটি জাতীয় উদ্যানে পরিণত হলে বন রক্ষা হবে, জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা যাবে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
৪. ধর্মপুর শালবনের মধ্যে কোন নদী প্রবাহিত হয়েছে?
বনের মধ্যে দিয়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ নোনা নদী প্রবাহিত হয়েছে।
৫. বন সংরক্ষণে সরকারের কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
সরকার বনটিকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে বন সংরক্ষণ সহজতর হবে।
আরো পড়ুন->>>