পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা

Sagar Kumar Kundu 10/30/2024 No Comments

পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা

পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা

কেলোকা পার্বতীপুর

পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (সংক্ষেপে: কেলোকা) বাংলাদেশের একটি প্রধান লোকোমোটিভ কারখানা, যেখানে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভের রক্ষণাবেক্ষণ ও ভারী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কারখানাটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পার্বতীপুর-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ লোকোমোটিভ কারখানা হিসেবে পরিচিত।

বিস্তারিত

পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানাটি একটি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত, যেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের একটি দল পুরাতন ইঞ্জিন মেরামত, নতুন ইঞ্জিন তৈরি, রেলওয়ে বগি এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ করেন। বাংলাদেশে মাত্র দুটি রেলওয়ে কারখানার মধ্যে এটি অন্যতম। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সব রেলওয়ে বগি, ইঞ্জিন মেরামত ও যন্ত্রাংশ তৈরির প্রধান কাজ এখানেই সম্পন্ন হয়।

পার্বতীপুর রেলওয়ে কারখানা

১৯৯২ সালের ১৪ মে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কারখানাটিতে যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, স্টোরসহ মোট ১১টি বিভাগ রয়েছে, যেখানে বরাদ্দকৃত জনবল সংখ্যা ৫৪৫ জন। তবে ২০১৯ সালের হিসাবে সেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩৬ জন, এবং শূন্য পদ রয়েছে ৩০৯টি। কারখানার বর্তমান প্রধান নির্বাহী (সিএক্স) হলেন শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ।

এই কারখানায় প্রতি ৬ বছর অন্তর প্রতিটি চলমান লোকোমোটিভের ভারী মেরামত (জেনারেল ওভারহোলিং বা জিওএইচ) করা হয়। এছাড়াও দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ত্রুটিযুক্ত লোকোমোটিভের বিশেষ মেরামতের ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা

২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর পারাবত এক্সপ্রেসে যুক্ত ২৯০০ সিরিজের লোকোমোটিভ ২৯৩৩ হবিগঞ্জের মাধবপুরে নোয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় লোকোমোটিভটির জ্বালানি ট্যাংকারে আগুন ধরে যায় এবং বিশাল অংশ পুড়ে যায়, ফলে এটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। প্রায় ৩ বছর পাহাড়তলী ডিজেল কারখানায় পড়ে থাকার পর, ২০১৯ সালের ১৫ মে এটি কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় পাঠানো হয়। ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দীর্ঘ ৮ মাস মেরামত শেষে লোকোমোটিভটিকে পুনরায় সচল ও ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, যা কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সমস্যা ও করণীয় 

পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার কয়েকটি সমস্যা ও করণীয় পদক্ষেপ নিম্নরূপ:

সমস্যা:

পুরনো যন্ত্রপাতি: কারখানার বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি অনেক পুরনো ও আধুনিক মানের নয়, যা উৎপাদনশীলতাকে ব্যাহত করে।

প্রশিক্ষণের অভাব: কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত, ফলে তাদের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

যন্ত্রাংশের ঘাটতি: প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে মেরামত ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলে।

কর্মী সংকট: বর্তমান কর্মীসংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম, যার ফলে কাজের চাপ বেড়ে যায়।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব: বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে।

করণীয়:

যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন: পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা জরুরি, যা উৎপাদনশীলতা ও কাজের গুণগত মান উন্নত করবে।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা আয়োজন করা উচিত।

যন্ত্রাংশের সরবরাহ নিশ্চিতকরণ: প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করে উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য করা সম্ভব।

কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি: পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে কাজের চাপ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ: বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে উৎপাদন কার্যক্রম আরও কার্যকর করা প্রয়োজন।

এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার বর্তমান সমস্যা সমাধান করা এবং এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

FAQs

১. পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা কোথায় অবস্থিত?

পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায়, পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে অবস্থিত।

২. কারখানাটির প্রতিষ্ঠা কবে এবং কত টাকা ব্যয়ে হয়েছে?

এটি ১৯৯২ সালের ১৪ মে ২০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. কারখানায় কোন ধরনের কাজ করা হয়?

এখানে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভের রক্ষণাবেক্ষণ, ভারী সংস্কার, নতুন ইঞ্জিন তৈরি এবং রেলওয়ে বগি তৈরির কাজ করা হয়।

৪. কারখানার বর্তমান কর্মীসংখ্যা কত?

বর্তমানে এখানে ২৩৬ জন কর্মী কর্মরত আছেন, এবং ৩০৯টি শূন্য পদ রয়েছে।

৫. পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান সমস্যা কী?

প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে পুরনো যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণের অভাব, যন্ত্রাংশের ঘাটতি, কর্মী সংকট এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব উল্লেখযোগ্য।

৬. কিভাবে কারখানার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব?

কারখানার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, দক্ষতার প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ এবং নিয়মিত যন্ত্রাংশ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

৭. কারখানার উল্লেখযোগ্য ঘটনা কী?

২০১৬ সালে পারাবত এক্সপ্রেসে যুক্ত ২৯০০ সিরিজের লোকোমোটিভ লাইনে বেরিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে এটি মেরামত করে পুনরায় সচল করা হয়, যা কারখানার একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা।

দিনাজপুর সম্পুর্কে আরোও পড়ুন->>>

পার্বতীপুর উত্তর পশ্চিম মৎস্য সম্প্রসারণ প্রকল্প: একটি সফল মৎস্য চাষের উদ্যোগ

পার্বতীপুরের দর্শনীয় স্থান – ক্যানেল পার্ক

চিরিরবন্দর বাইতুল আমান জামে মসজিদ: ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু

দিনাজপুর ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি

চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদের পুকুর: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার