Ad Details
-
Ad ID: 4480
-
Added: 10/30/2024
-
Condition:
-
Views: 42
Description
হাজী মোহাম্মদ দানেশ (২৭ জুন ১৯০০ – ২৮ জুন ১৯৮৬)
হাজী মোহাম্মদ দানেশ ছিলেন অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের একজন প্রভাবশালী কৃষক নেতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তেভাগা আন্দোলনের ‘জনক’ নামে পরিচিত দানেশ কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত ছিলেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দিনাজপুরে প্রতিষ্ঠিত কৃষি কলেজটি ১৯৯৯ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত হয়।
দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে দানেশ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেন। ঠাকুরগাঁও এবং বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলে মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁর এই বিপ্লবী ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় আজও উজ্জ্বলভাবে স্মরণীয়।
সৈয়দ আবদুস সামাদ (ডিসেম্বর ৬, ১৮৯৫ – ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৬৪)
সৈয়দ আবদুস সামাদ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন কিংবদন্তি ফুটবল খেলোয়াড়, যাকে ফুটবলপ্রেমীরা ‘ফুটবলের জাদুকর’ বলে অভিহিত করতেন। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে ফুটবল জীবনের শুরু করে তিনি বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্লাব, মোহনবাগান এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ফুটবল কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত করে। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ফুটবল খেলে গেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে এক বিরল কীর্তি।
ইউসুফ আলী (১৯২৩ – ১৯৯৮)
ইউসুফ আলী ছিলেন স্বাধীনতার সনদ পাঠক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭২-৭৬ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতিতে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি চারটি ভিন্ন সরকারের অধীনে মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিরল উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ত্রাণ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এবং মুজিবনগরে গঠিত অস্থায়ী সরকারে স্বাধীনতার সনদ পাঠ করেন। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তিনি নশিপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং পূনর্ভবা নদীর ওপর কাঞ্চন সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
খুরশীদ জাহান হক (১১ আগস্ট ১৯৩৯ – ১৪ জুন ২০০৬)
চকলেট আপা নামে পরিচিত খুরশীদ জাহান হক ছিলেন একজন প্রভাবশালী বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। খুরশীদ জাহান ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে দিনাজপুর-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বেদারউদ্দিন আহমদ (১৫ মার্চ ১৯২৭ – ১৩ জানুয়ারি ১৯৯৮)
বেদারউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
বেদারউদ্দিন ছোটবেলা থেকেই সংগীতচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির অধ্যক্ষ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
দিনাজপুর জেলার ইতিহাস সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে এখানে ভিজিট করুন।
মতিউর রহমান চৌধুরী
মতিউর রহমান চৌধুরী একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সম্পাদক এবং টক-শো হোস্ট। তিনি মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এবং ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। মতিউর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপসহ পাঁচটি বিশ্বকাপ কভার করেন এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পাওলো রসি এবং জন বার্নেসের মতো কিংবদন্তিদের সাক্ষাৎকার নেন। তাঁর স্ত্রী মাহবুবা চৌধুরীও একজন কবি এবং সংবাদ উপস্থাপক।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ তৈমুর
আলহাজ্ব মোহাম্মদ তৈমুর ছিলেন প্রাথমিক যুগের একজন অগ্রণী শিক্ষাবিদ এবং দিনাজপুরের একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষার প্রসারে নিবেদিত ছিলেন এবং মক্তব, মাদ্রাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। নারীদের শিক্ষায় উৎসাহ প্রদান করায় তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধর্মীয় এবং সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী ছিলেন। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলো ইসলামী সাহিত্য জগতে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। জীবনের শেষ সময়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
এম আব্দুর রহিম (২১ নভেম্বর ১৯২৭ – ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬)
এম আব্দুর রহিম বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।
রাজনীতিতে তাঁর অবদান দেশের সংবিধান রচনায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দিনাজপুরে তাঁর নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা তাঁর স্মৃতি ধরে রেখেছে।
আলহাজ্ব হেমায়েত আলী টি.কে.
খাজা নাজিমউদ্দিন মুসলিম হল ও লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব হেমায়েত আলী লালবাগ মহল্লার অধিবাসী ছিলেন এবং পেশায় আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৩৩ সালে তার উদ্যোগে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিনাজপুরে মুসলমানদের জন্য জ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তৎকালীন সময় মুসলিম সমাজের জন্য এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বিরল। আর্থিক সংকটসহ নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা তার অসাধারণ কৃতিত্বের নিদর্শন।
১৯৪১ সালে তারই উদ্যোগে মাসিক নওরোজ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকা ছাপানোর জন্য নওরোজ প্রিন্টিং প্রেস স্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে নওরোজ সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হন। ১৯৬৮ সালে জেলা প্রশাসক আ.ক.ম. যাকারিয়া ও মেহরাব আলীর যৌথ উদ্যোগে দিনাজপুর যাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময়েও তার সহযোগিতা ছিল অগ্রগণ্য।
দিনাজপুরের যাবতীয় তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন।
১৯৫৪ সালে নওরোজ সাহিত্য মজলিসের পক্ষ থেকে বোস্তান হলে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যেখানে তাকে মূল্যবান উপহারও প্রদান করা হয়। পাকিস্তান সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য তাকে টি.কে. উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মির্জা কাদের বক্স
মির্জাপুরের বিখ্যাত মির্জা পরিবারের কৃতি সন্তান কাদের বক্স ছিলেন দিনাজপুর বারের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী। তিনি ১৯১৫-১৬ সালে দিনাজপুর মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য (এমএলসি) ছিলেন। পাশাপাশি তিনি জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বহু সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
কাদের বক্সের সাহস, নির্ভীকতা এবং স্পষ্টবাদিতা তাকে দিনাজপুরের সিংহ পুরুষ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছিল। তৎকালীন সাম্প্রদায়িক বিভেদ তার কাছে ছিল অসহনীয়, এবং তিনি এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা সহ্য করতেন না। সমাজের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আপসহীন নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। তার বাসভবন বালুবাড়ীতে নির্মিত মসজিদও তার আমলে তৈরি হয়। ১৯৪৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রহিম উদ্দিন আহমদ
রহিম উদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী এবং দিনাজপুরের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পাকিস্তান সরকারের শোষণের বিরোধিতায় জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় সাহসিক ভূমিকা পালন করেন।
তার নেতৃত্বেই ১৯৫৩ সালে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ গঠিত হয় এবং তিনি এর প্রথম সভাপতি হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়, যা তাকে প্রথম কারাবন্দী ভাষাসৈনিক হিসেবে পরিচিতি দেয়। জীবনের শেষ দিকে তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ডা. আনোয়ারা খাতুন
দিনাজপুরের খাঁ বংশের কৃতি কন্যা ডা. আনোয়ারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মুসলিম মহিলা চিকিৎসক। ১৯৪২ সালে কলকাতা থেকে এমবি পাশ করার পর তিনি লন্ডন রয়েল কলেজ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে কলকাতায়, যেখানে তিনি পার্কভিউ নার্সিং হোম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন এবং দিনাজপুরবাসীর জন্য তার কৃতিত্ব ছিল বিশেষ গর্বের বিষয়। তিনি ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
স্বভাব কবি মো. নূরুল আমিন
স্বভাব কবি মো. নূরুল আমিন দিনাজপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ঘোনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অলিমুদ্দীন সরদার এবং মাতা মোওলাতুন্নেছা পরিবিবির আদরে বড় হওয়া নূরুল আমিন স্কুলজীবন থেকেই কাব্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন।
১৯৩১ সালে গুরু ট্রেনিং পরীক্ষায় কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় ১৭তম স্থান অধিকার করেন, তবে গুরুগিরির জীবন তার মন টানেনি। দেশ ভ্রমণের নেশায় বেরিয়ে পড়েন এবং ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে এসে এখানকার প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে পাহাড়পুরে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং দিনাজপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।
দিনাজপুর জেলার এই বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁদের অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
আরোও জেলা জানুন – >>>