বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প
admin 11/13/2024 No Comments
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোন জেলায় অবস্থিত:
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোন জেলায় অবস্থিত? … ১৯৮৫ সালে আবিষ্কার হওয়া বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার চৌহট্টি গ্রামে অবস্থিত।বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি (Barapukuria Coal Mine) বাংলাদেশে অবস্থিত একমাত্র উৎপাদনশীল কয়লা খনি, যা দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত। ১৯৮৫ সালে এখানে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়, এবং খনি উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় ২০০৫ সালে।
ইতিহাস:
ব্রিটিশ ভারত ভাগের পূর্বে, মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে পূর্ব বঙ্গের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহন করা হত ও বাণিজ্য করা হত। পরে ঢাকায় একটি খনি অফিস খোলা হয় এবং ভারতের ব্রিটিশরেল নেটওয়ার্ক বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে সহায়তা করে। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, পাকিস্তানের ভূতাত্ত্বিক জরিপ কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘ-পাক খনিজ জরিপ প্রকল্প শুরু করে। ১৯৬২ সালের জরিপে দেখা যায়, সুনামমগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জে ১.০৫ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮৫ সালে, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর দিনাজপুরে কয়লা আবিষ্কার করে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রংপুর জেলার খালাশপিরে একটি এবং ১৯৯৫ সালে দিঘিপাড়ায় একটি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত। বহুজাতিক বিএইচপি ১৯৯৭ সালে ফুলবাড়ি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে।
কয়লা উত্তোলনের জন্য বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানি চীনের কোম্পানি সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন চুক্তি করে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বড়পুুকুরিয়া কয়লাখনির অভ্যন্তর থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়। এই কয়লাখনিতে মোট কয়লার মজুত প্রায় ৩০ কোটি টন, যা প্রায় ৬৫০ হেক্টর এলাকাব্যাপী বিস্তৃত। এলাকাটি তিনটি অংশে বিভক্ত, উত্তর এলাকা (২৭০ হেক্টর), মধ্য এলাকা (৩০০ হেক্টর) ও দক্ষিণ এলাকা (৮০ হেক্টর)।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মূলত ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যেখানে কয়লা ৩০০ মিটার থেকে ৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন করা হয়। এখান থেকে উত্তোলিত কয়লা প্রধানত বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রাখে।তবে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কার্যক্রমে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন ভূগর্ভস্থ জলাধার নিঃশেষ হওয়া, পরিবেশগত ঝুঁকি, এবং স্থানীয় কৃষি ও জনজীবনে প্রভাব। এছাড়াও খনি থেকে কয়লা চুরি ও দুর্নীতির অভিযোগও মাঝে মাঝে ওঠে, যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তদন্ত হয়েছে।
বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ:
খনির এক হাজার ৪১২ নম্বর ফেজের (নির্গমন মুখ) মজুত শেষ হওয়ায় আজ শনিবার ভোর ৬টা থেকে কর্তৃপক্ষ উত্তোলন বন্ধ করে।কয়লা খনির কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ১২ অক্টোবর থেকে এক হাজার ৪১২ নম্বর ফেজের কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। ওই ফেজ থেকে দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছিল। এই ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি নতুন ফেজে (এক হাজার ২০৯) স্থানান্তর ও স্থাপন করতে প্রায় দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগবে। নতুন ফেজে তিন লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে।আগামী ২০২৪ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরুর আশা করছে খনি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ইয়ার্ড ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইয়ার্ডে এক লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘খনির এক হাজার ৪১২ নম্বর ফেজের উত্তোলনযোগ্য কয়লা শেষ হওয়ায় নতুন ফেজে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কয়লা উত্তোলন করা হনতুন ফেজ তৈরি ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা খনির নিয়মিত একটি কাজ। আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে।’
প্রতিকূল প্রভাব:
খনির আশেপাশের স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘরের ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। খনির পাশের জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে। জবাবে সরকার খনির কাছাকাছি জমি অধিগ্রহণ করেছে।
এছাড়াও দেখুন
- বাংলাদেশে কয়লা খনন
- বড়পুকুরিয়া কয়লা কেলেঙ্কারি
- বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র
- আপনারা বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন ->>বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প