বিরামপুর রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি
Badhon Roy 10/27/2024 No Comments
রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার রতনপুরে অবস্থিত রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই বাড়িটি অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্যের একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান অবস্থা:
দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িটির যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় বাড়িটির অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়ির দেয়াল ফাটল ধরেছে, ছাদ ভেঙে গেছে এবং অনেক কামরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জমিদার বাড়ির ভবন এখন ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে রয়েছে। এছাড়াও জমিদারদের সম্পত্তির উপর এখন একটি ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ রয়েছে।
ইতিহাস
বিরামপুর উপজেলার উত্তরে ১২ কিলোমিটার দুরে খানপুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অষ্টাদশ শতকের জমিদার বাড়িসহ জমিদারের ১২শ বিঘা জমি বনজ ফলজ ও ওষুধি বাগান রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রিটিশরা অষ্টাদশ শতকে ফুলবাড়ি জমিদারের পক্ষে খাজনা আদায়কারী হিসাবে রাজকুমার সরকারকে বিরামপুরের রতনপুর কাচারীতে প্রেরণ করা হয়। এখান থেকে তিনি বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ফুলবাড়ী এলাকার প্রজাদের নিকট থেকে নৈপুণ্য ও যোগ্যতার সাথে খাজনা আদায় করতেন। আদায়কারী কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে জমিদার তার বোনের সাথে রাজকুমারের বিয়ে দেয় এবং সাড়ে ৬শ বিঘা জমিসহ রতনপুর কাচারী উপহার দেন। সাধারণ আদায়কারী থেকে জমিদার বনে রাজকুমার আরো অধিক অর্থসম্পদের নেশায় মেতে ওঠেন। অপরদিকে একই মৌজায় আড়াইশত একর জমি ও অঢেল অর্থের মালিক রঘুহাসদা নামের একজন প্রতাপশালী সাঁওতাল ছিলেন। রাজকুমার সুযোগ বুঝে সাঁওতাল বঘু হাসদার কাছ থেকে ৫ বস্তা কাঁচা টাকা ধারে নিয়ে অন্য জমিদারের আরো ৩শ একর জমি নিলামে ডেকে ৫০ একর ফলের বাগান দখল করে নিয়ে উপকারী রঘু হাসদাকে বিতাড়িত করেন। এলাকার একক জমিদার হিসেবে তৈরী করে সুদৃশ্য দ্বিতল বিশিষ্ট মনোরম অট্টালিকা। জানা যায়, নতুন জমিদার রাজকুমারের রতন কুমার ও রক্ষনী কুমার নামে দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে ১৬ বছর বয়সের বড় ছেলে রতন কুমার মন্দিরের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে মারা যায়। পুত্র শোকে কিছুদিন পর রাজকুমারের মৃত্যু ঘটলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অঢেল সম্পদ, বাগান ও পুকুরসহ ১২শ বিঘা জমিদারী লাভ করেন রক্ষুনী রাজকুমার সরকার। বর্তমানে এখানে গড়ে উঠেছে একটি ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদসহ বিশাল একটি পুকুর। জমিদারের তৈরীকৃত সুদৃশ্য দ্বিতল অট্টালিকাটিতে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে কাজ করছে। জেলা প্রশাসক রক্ষুনী বাবুর সম্পত্তি ১নং খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যুগ যুগ ধরে এই জমিদার বাড়ীটি মেরামত ও সংষ্কার না করায় তা ধ্বংস হতে চলছে। বিরামপুর অঞ্চলের শাসক এবং জমিদার রখুনি কান্ত তার বসবাসের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় সে এ স্থান থেকে চলে যায়।
যাত্রাপথ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা এবং বিরামপুর উপজেলার প্রধান সংযোগ রোডের মাঝামাঝি স্থান জয়নগর বাজার থেকে সোজা পূর্ব দিকে রতনপুর বাজারে আসতে হবে। রতনপুর বাজার থেকে ঠিক উত্তর দিকে রক্ষণীকান্ত জমিদার বাড়িটি অবস্থিত ।
কেন দেখবেন:
০১.ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এই বাড়িটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
০২.স্থাপত্যের নিদর্শন: এই বাড়িটি অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্যের একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
০৩.প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বাড়িটির চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে।
০৪.ঐতিহ্যবাহী বাংলার ছোঁয়া: এই বাড়িটি ঐতিহ্যবাহী বাংলার জীবনযাত্রার একটি ছবি তুলে ধরে।
সতর্কতা:
বাড়িটির অনেক অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই বাড়িটি ঘুরতে গেলে সাবধান থাকুন।
দিনাজপুরের আরো দর্শনীয় স্থান সমুহ->>>