ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ – খানসামা উপজেলা

Badhon Roy 10/30/2024 No Comments

ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ – খানসামা উপজেলা

ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ – খানসামা উপজেলা

আওকরা মসজিদ বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি ১৭৬৬ সালে মির্জা লাল বেগ প্রতিষ্ঠা করেন।

অবস্থান

দিনাজপুরে যেসব ঐতিহ্যবাহী পুরনো স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম খানসামা উপজেলার প্রায় ২৫৮ বছরের পুরনো আওকরা মসজিদ। এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের পাকেরহাট গ্রামের সীমান্তে হাসিমপুর এলাকার বুকচিরে বয়ে চলা বেলান নদীর তীরে মির্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।

নামকরণ ও স্থপতির ইতিহাস

এটির নামকরণের পেছনে রয়েছে অলৌকিক ইতিহাস। প্রাচীন এ মসজিদকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা কথা। ‘আওকরা’ শব্দের অর্থ কথা বলা। জনশ্রুতি আছে, এই মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কথা বললে প্রতিধ্বনি হতো। তাই স্থানীয়রা মসজিদটির নাম রাখেন ‘আওকরা’ বা কথা বলার মসজিদ। তবে নির্মাণের সময় মসজিদটি কি নামে পরিচিত ছিল তা স্থানীয়দের কেউ বলতে পারেননি।

জনশ্রুতি আছে এক সময় মসজিদের আশপাশে ছিল মুসলিম জনবসতি। মির্জা লাল বেগ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কথা ভেবে ১৭৬৬ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময়ে এখানে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হতো। এর নির্মাণ শৈলী চমৎকার। অভ্যন্তরে তৎকালীন কারুকাজ করা।

মসজিদটি নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ গবেষণা করলে এর সঠিক ইতিহাস বের হবে বলে স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মসজিদটির সংলগ্ন একটা ভিত্তি প্রস্তর ছিল। তাতে ছিল মির্জা লাই বেগ। ধারণা করা হচ্ছে মোঘল আমলে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি। সম্রাট আকবরের দ্বীন-ই-এলাহী মতবাদের ভিত্তিতে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। একই সাথে ওই এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ও আছে।

রক্ষণাবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ

ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ একটি মূল্যবান সম্পদ, তবে এর সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে থাকবে।

আওকরা মসজিদ তার স্থাপত্যশৈলী, ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি খানসামা উপজেলার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ এবং বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যের গৌরবময় নিদর্শন।

সংস্কৃতি ও সামাজিক গুরুত্ব

আওকরা মসজিদ শুধু প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শনই নয়, এটি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। স্থানীয়রা এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, যেমন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় এই মসজিদে বিশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদটির সামাজিক গুরুত্বও অপরিসীম। এটি এলাকাবাসীর মিলনস্থল এবং ঐতিহ্যবাহী সভা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মসজিদটি এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধতার অন্যতম মাধ্যম।

কেন ঘুরতে যাবেন ?

ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদ, যা দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলায় অবস্থিত, একটি ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই মসজিদে ঘুরতে যাওয়ার কয়েকটি বিশেষ কারণ রয়েছে:

১. ঐতিহাসিক গুরুত্ব

আওকরা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল মোগল আমলে। এটি সেই সময়ের ধর্মীয় ও স্থাপত্যকলার একটি দৃষ্টান্ত। যারা ইতিহাস ও পুরনো স্থাপত্যে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হতে পারে।

২. স্থাপত্যশৈলী

মসজিদটির নির্মাণশৈলী মোগল স্থাপত্যের ছোঁয়া বহন করে। এর দেয়ালের কারুকাজ, মেহরাব, এবং অন্যান্য নকশা সেই সময়ের শিল্পকলা ও নির্মাণের নিখুঁত উদাহরণ।

৩. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

মসজিদটি একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবস্থিত, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। এর আশেপাশের সবুজ গাছপালা এবং নিরিবিলি পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

৪. আধ্যাত্মিক শান্তি

যারা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রশান্তি খোঁজেন, তাদের জন্য এই মসজিদ একটি আদর্শ স্থান হতে পারে। এখানে প্রার্থনা করে বা কিছুক্ষণ নীরব ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক শান্তি অনুভব করা যায়।

৫. স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

খানসামা উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগও পাওয়া যায়। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে।

এই সব কারণেই ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদে ভ্রমণ করা মানে শুধু একটি মসজিদ দেখা নয়, বরং এটি একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের অভিজ্ঞতা।

দিনাজপুরের মধ্যে যে কয়টা জায়গা আছে দেখার মতো সেসব জায়গা ঘুরে আসুন এবং সেসব জায়গায় কিভাবে যাবেন ও তাদের বর্ননা জানুন এখানেঃ>>>>>>

কান্তজিউ মন্দির দিনাজপুর
সুখ সাগর দিনাজপুর 
নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর 
রাজবাড়ী দিনাজপুর