দিনাজপুর জেলা

1 of
Previous Next

Ad Details

  • Ad ID: 1994

  • Added: 09/11/2023

  • Views: 164

Description

দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে দিনাজপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] দিনাজপুর জেলা আয়তনে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার মধ্যে বৃহত্তম।

ইতিহাস
প্রাচীনকালে অবস্থান ও সীমানা
প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দিনাজপুরের ইতিহাস সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য দেখা যায়। দামোদরপুরে প্রাপ্ত গুপ্তযুগের পাঁচটি তাম্রলিপি, বৈগ্রামে প্রাপ্ত কুমারগুপ্তের শাসনকালের একটি তাম্রলিপি ও বেলোয়াতে প্রাপ্ত প্রথম মহীপাল ও তৃতীয় বিগ্রহ পালের শাসনকালে প্রাপ্ত দুইটি তাম্রলিপি পাঠে জানা যায়, গুপ্ত যুগ থেকে আরম্ভ করে প্রথম মহীপালের রাজত্ব কাল পর্যন্ত পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির অধীনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে কোটিবর্ষ ও পঞ্চনগরী নামক দুটি বিষয় ছিল। কোটিবর্ষ বিষয় ছিল ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের অন্তর্গত গঙ্গারামপুর থানার নিকটবর্তী বাণগড় বা কোটিবর্ষ নামক স্থানে। বিষয় বলতে মূলত জেলা জাতীয় প্রশাসনিক অবকাঠামোকে বোঝায়।

পঞ্চনগরী বিষয় কোথায় ছিল, তা আজ পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। গ্রিক ইতিহাসে বর্ণিত পেন্টাপলিস এবং গুপ্ত ও পালযুগের বিভিন্ন তাম্রলিপিতে উল্লিখিত পঞ্চনগরী যে অভিন্ন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম মহীপালের রাজত্বের পর পরই যে পঞ্চনগরীর অবনতি ঘটে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রথম মহীপাল ও তৃতীয় বিগ্রহ পালের বেলওয়া তাম্রলিপি থেকে। বাণগড় তাম্রলিপি ও দামোদরপুর তাম্রলিপিগুলি থেকে জানা যায় যে, কোটিবর্ষ বিষয়ের পূর্ব সীমানা ছিল খুব সম্ভবত ফুলবাড়ি থানার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী এবং করতোয়ার যে প্রবাহটি বিরামপুরের উত্তরে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল, তা বোধহয় ফুলবাড়ি-বিরামপুর অঞ্চলে কোটিবর্ষ বিষয়ের দক্ষিণ সীমা নির্দেশ করত। এর পরে যমুনা নদীই ছিল কোটিবর্ষ বিষয়ের পূর্ব সীমানা। দামোদরপুর তাম্রলিপির চণ্ডীগ্রাম খুব সম্ভব বর্তমান চন্ডীপুর।

বৈগ্রাম ও বেলওয়া তাম্রলিপিদ্বয় থেকে ধারণা করা যায় যে, পঞ্চনগরী বিষয়ের পশ্চিম সীমানা ছিল খুব সম্ভব প্রাচীন যমুনা নদী এবং উত্তর ও পূর্ব সীমানা ছিল খুব সম্ভব যথাক্রমে করতোয়া নদীর একটি প্রবাহ ও করতোয়া নদী। দক্ষিণ দিকে এ বিষয়ের সীমানা কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল, তার সঠিক বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে পুণ্ড্রবর্ধনের নিকটবর্তী অঞ্চলে শিলবর্ষ নামক একটি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া যায়। এ বিষয়ের উত্তরেই ছিল খুব সম্ভব পঞ্চনগরীর দক্ষিণ সীমানা। এ তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে, দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা, ঘোড়াঘাট থানার সম্পূর্ণ অংশ, হাকিমপুর ও বিরামপুর থানার অধীনে যমুনা নদীর পূর্বতীরবর্তী এলাকা, রংপুর জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার অধীনে করতোয়ার পশ্চিমে তীরবর্তী অঞ্চল, বগুড়া জেলার ক্ষেতলাল ও পাঁচবিবি থানাদ্বয়ের সমগ্র অঞ্চল এবং জয়পুরহাট থানার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল পঞ্চনগরী।

এই সমগ্র এলাকায় অনেকগুলো প্রাচীন জনপদ আছে। সেগুলোর মধ্যে সীতাকোট-নবাবগঞ্জ, চকজুনিদ-দারিয়া, ভাদুরিয়া-হরিনাথপুর, বেলওয়া-পল্লরাজ ঘোড়াঘাট-রোগদহ-সাহেগঞ্জ, বিরাটনগর, টুঙ্গিশহর, পাথরঘাটা, (মহীগঞ্জ) ও চরকাই-বিরামপুরের নাম উল্লেখের দাবি রাখে। এগুলোর মধ্যে নানা কারণে পাথরঘাটা ও চরকাই-বিরামপুরের মধ্যে একটিকে পঞ্চনগরী বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

এদিক থেকে বিচার করতে গেলে চরকাই-বিরামপুরকে পঞ্চনগরী বলে ধরে নেওয়া অধিক যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। চরকাই-বিরামপুর এলাকায় ৫টি ভিন্ন ভিন্ন অথচ একত্রে সংযোজিত নগরের ধ্বংসাবশেষ বেশ পরিষ্কারভাবে বিদ্যমান। চন্ডিপুর-গড় পিঙলাইকে কোটিবর্ষ বিষয়ের অধীনে ধরে বাদ দিলেও আরও ৫টি স্বতন্ত্র নগরীর চিহ্ন সহজেই ধরা পড়ে। এগুলি ছিল নিম্নরূপ

(১) চোর চক্রবর্তী ধাপের কিছু পশ্চিম থেকে আরম্ভ করে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার স্থান জুড়ে ছিল একটি জনপদ
(২) এই জনপদের পশ্চিম দিকে যমুনা নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত যে এলাকায় বর্তমান রেলস্টেশন, গঞ্জ ও শহর অবস্থিত সেখানে ছিল খুব সম্ভব দ্বিতীয় নগর
(৩) রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং থেকে আরম্ভ করে দক্ষিণে বিরামপুর কলেজের দক্ষিণ পর্যন্ত রেললাইনের উভয়পার্শ্বে অবস্থিত প্রায় ৮ কিলোমিটার স্থান জুড়ে ছিল খুব সম্ভব তৃতীয় জনপদ
(৪) কলেজ এলাকার দক্ষিণে অবস্থিত গড়েরপাড়, বেগমপুর (চাংগইর) ইত্যাদি মৌজা নিয়ে গঠিত ছিল খুব সম্ভব চতুর্থ জনপদ
(৫) পঞ্চম জনপদটি ছিল খুব সম্ভব মির্জাপুর জামলেশ্বর মন্ডপ (ভোলাগঞ্জ) এলাকায়। এ পঞ্চ জনপদের সমন্বয়ে গঠিত পঞ্চনগরী ছিল প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার স্থান জুড়ে এক বিশাল জনপদ। এর কেন্দ্র ছিল খুব সম্ভব তৃতীয় জনপদটিতে। প্রাচীন জন্তু নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এ নগরের খ্যাতি সূদুর ইউরোপ পর্যন্ত পৌছেছিল। সুতরাং বলা যায় যে, পঞ্চনগরীর মধ্যেই বিরামপুরের অবস্থান ছিল একথা বলা যেতে পারে। তাছাড়া বিরামপুরের সকল পার্শ্ববর্তী এলাকা ভোলাগঞ্জ নামেই পরিচিত ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রাচীন যুগ
দিনাজপুর একসময়ে পুণ্ড্রবর্ধনের অংশ ছিল। লক্ষ্ণৌতির রাজধানী দেবকোটের অবস্থান ছিল দিনাজপুর সদরের ১১ মাইল দক্ষিণে।

সম্প্রতি ঘোড়াঘাট উপজেলার সুর মসজিদের পাশের পুকুর থেকে গুপ্ত যুগের একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে।

ব্রিটিশ শাসন
১৭৬৫ সালে দেওয়ানি গ্রহণের ফলে দিনাজপুর জেলা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণভুক্ত হয়। ১৭৭২ সালে দিনাজপুরে একজন ইংরেজ কালেক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় এই অঞ্চলের অরাজকতার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৭৮৬ সালে এখানে ইংরেজ শাসকদের দ্যা ব্রিটিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কন্ট্রোল (The British Administrative Control) গঠিত হয়। সেই সময় লক্ষ্ণৌতি, বাজিন্নাতাবাদ, তেজপুর, পানজারা, ঘোড়াঘাট, বারবকাবাদ ও বাজুহা, এই ছয়টি সরকারের অংশ নিয়ে দিনাজপুর জেলা (তখনকার ঘোড়াঘাট জেলা) গঠিত হয়। দিনাজপুর সদরে জেলা সদর গঠিত হয়।[৩] ১৭৮৬ সালে ম্যারিয়ট নামে একজনকে কালেকটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপর রেড ফার্ন ও ভ্যানসিটার্ট অল্প সময়ের জন্য দিনাজপুরের কালেকটর নিযুক্ত হন। পরবর্তী কালেকটর হ্যাচ জেলার বিচারের কাজেও নিযুক্ত হন। সেই সময় জেলা প্রশাসনের সীমানা মালদা ও বগুড়ার দিকে অগ্রসর হয়। আঠারো শতকের শেষ দিকে দিনাজপুরে নীল চাষ শুরু হয়।

দিনাজপুর ছিল অবিভক্ত বাংলার সর্ববৃহৎ জেলা। বগুড়া, মালদা, রাজশাহী, রংপুর ও পূর্ণিয়া জেলার বেশকিছু অংশ তখন দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৫৭-৬১ সালের জরিপ অনুসারে দিনাজপুর জেলার আয়তন ছিল ৪,৫৮৬ বর্গমাইল (১১,৮৮০ কিমি২)। প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগের সুবিধার্থে ১৭৯৫ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে জেলার একটি বিশাল অংশ রাজশাহী, রংপুর ও পূর্ণিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৩৩ সালে আবার বেশ কিছু এলাকা বগুড়া ও মালদায় চলে যায়। পরবর্তীতে ১৮৬৪-৬৫, ১৮৬৮ ও ১৮৭০ সালে আরো এলাকা মালদা ও বগুড়া জেলার অধীনে স্থানান্তর করা হয়। সবশেষে ১৮৯৭-৯৮ সালে সম্পূর্ণ মহাদেবপুর থানাকে রাজশাহীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই সময় শুধু ঠাকুরগাঁও উপবিভাগ ব্যতীত সম্পূর্ণ দিনাজপুর জেলা কালেকটরের অধীনে শাসিত হতো।

১৮৫৬ সালে দিনাজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার প্রথম দিককার ৪০টি পৌরসভার মধ্যে এটি অন্যতম। শুরুতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টাউন কমিটি পৌরসভা শাসন করত। পরবর্তীতে ১৮৬৮ সালে ‘জেলা শহর আইন’-এ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বদলে একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয় এবং চেয়ারম্যানকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সমমর্যাদায় আসীন করা হয়। ১৮৬৯ সালে প্যাটারসন নামক একজনকে দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।[৪]

১৯৪৬-৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলনে দিনাজপুর জেলার মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে দিনাজপুরের একটি বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে চলে যায় এবং তার নাম হয় পশ্চিম দিনাজপুর জেলা। ১৯৮৪ সালে দিনাজপুরের দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় পৃথক জেলায় পরিণত হয়।[৫]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর ৬ ও ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ৬ নং সেক্টরের আওতায় ছিল দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চল ছিল ৭ নং সেক্টরের আওতায়। ২৯ মার্চ ফুলবাড়ী উপজেলার দিনাজপুর রোডে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্রসহ বহু রসদপত্র দখল করে। ৮ এপ্রিল পার্বতীপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, বাগবাড়ী ও পেয়াদাপাড়ায় পাকবাহিনী প্রায় ৩০০ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী হাকিমপুর উপজেলার হিলি আক্রমণ করে। হাকিমপুর ছাতনীতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বিরামপুর উপজেলার কেটরা হাটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ৭ জন পাকসেনা নিহত এবং ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০ জুলাই পাকসেনারা নবাবগঞ্জ উপজেলার খয়েরগনি গ্রামে ২১ জন নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা ১০ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলার চড়ারহাটে ১৫৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী বিরল উপজেলার বিজোড় ইউনিয়নের বহলায় ৩৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ২১ নভেম্বর-১১ ডিসেম্বর হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ৩৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বীরগঞ্জ উপজেলার ভাতগাঁও ব্রিজের পূর্বপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং পাকবাহিনীর দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। লড়াইয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৪ ডিসেম্বর তারিখে সাধারণ জনগণ বিরামপুর উপজেলার বেপারীটোলায় একটি জীপ আক্রমণ করে কয়েকজন পাকসেনাকে হত্যা করে। ১৫ ডিসেম্বর বগুলাখারীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও বিরল উপজেলার বহবল দীঘিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। কাহারোল উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১০ জন পাকসেনা ও ৭ জন নিরীহ বাঙালি নিহত হয়।[৫]

মুক্তিযুদ্ধের পর দিনাজপুরে ৪টি বধ্যভূমি ও ৭টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। শহীদদের স্মরণে দিনাজপুর জেলায় মোট ৫টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।[৫]

প্রতিষ্ঠা ও নামকরণ
দিনাজপুর জেলা ১৭৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি আছে, জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারেই রাজবাড়িতে(রাজবাটী) অবস্থিত মৌজার নাম হয় “দিনাজপুর”। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিল করে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে “দিনাজপুর”।

অবস্থান ও আয়তন
দিনাজপুর জেলার উত্তরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও পঞ্চগড় জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা ও রংপুর জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। এই জেলার মোট আয়তন প্রায় ৩৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার।

দিনাজপুর রেলওয়ে ব্রিজ
প্রশাসন
দিনাজপুরে ডেপুটি কমিশনার (DC) হিসাবে নিযুক্ত আছেন মোঃ মাহমুদুল আলম [৬] এবং জেলা পরিষদের প্রধান হলেন আজিজুল ইমাম চৌধুরী।[৭]

উপজেলা ভিত্তিক আয়তন
আয়তন অনুযায়ী দিনাজপুরের উপজেলাসমূহ

বিরামপুর (৬.৩২%)
দিনাজপুর সদর (১০.৫৭%)
খানসামা (৫.৩৫%)
ফুলবাড়ী (৬.৮৪%)
বোচাগঞ্জ (৬.৭%)
বীরগঞ্জ (১২.৩১%)
চিরিরবন্দর (৯.৩২%)
ঘোড়াঘাট (১.৭১%)
হাকিমপুর (২.৯৭%)
নবাবগঞ্জ (৯.৪৬%)
পার্বতীপুর (১১.৭৬%)
বিরল (১০.৫৭%)
দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা ও ৯টি পৌরসভা আছে।

উপজেলা
দিনাজপুর সদর
বিরামপুর
খানসামা
বীরগঞ্জ
বোচাগঞ্জ
ফুলবাড়ী
চিরিরবন্দর
ঘোড়াঘাট
হাকিমপুর
কাহারোল
নবাবগঞ্জ
পার্বতীপুর
বিরল।
এর মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় হলো বীরগঞ্জ উপজেলা (৪১৩ বর্গ কিমি; প্রায় ১২.০১% স্থান নিয়ে) এবং সবচেয়ে ছোট হলো হাকিমপুর উপজেলা (৯৯.৯২ বর্গ কিমি)।[৫]

পৌরসভা
দিনাজপুর
পার্বতীপুর
ফুলবাড়ী
বীরগঞ্জ
সেতাবগঞ্জ
হাকিমপুর
বিরামপুর
ঘোড়াঘাট
বিরল
এছাড়াও দিনাজপুর জেলায় মোট ১০৩টি ইউনিয়ন ও প্রায় ২১৪২টি গ্রাম রয়েছে।

জনপ্রতিনিধি
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৮] সংসদ সদস্য[৯][১০][১১][১২][১৩] রাজনৈতিক দল
দিনাজপুর-১ বীরগঞ্জ উপজেলা ও কাহারোল উপজেলা মনোরঞ্জন শীল গোপাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দিনাজপুর-২ বোচাগঞ্জ উপজেলা ও বিরল উপজেলা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দিনাজপুর-৩ দিনাজপুর সদর উপজেলা ইকবালুর রহিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দিনাজপুর-৪ খানসামা উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলা আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দিনাজপুর-৫ ফুলবাড়ী উপজেলা ও পার্বতীপুর উপজেলা মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দিনাজপুর-৬ নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর,বিরামপুর, ও ঘোড়াঘাট উপজেলা। শিবলী সাদিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
জনসংখ্যা উপাত্ত
ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী দিনাজপুরের জনসংখ্যা
ধর্ম শতাংশ
ইসলাম

৭৭.৮৪%
হিন্দুধর্ম

১৯.৭৪১৫%
বৌদ্ধধর্ম

০.০৪১৩%
খ্রিস্টধর্ম

১.০৬১২%
অন্যান্য

১.৩১৬%
দিনাজপুর জেলার জনসংখ্যা ২৬,৪২,৮৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩,৬৩,৮৯২ জন ও মহিলা ১২,৭৮,৯৫৮ জন। দিনাজপুর জেলায় ২০,৫৭,০৩০ জন মুসলিম, ৫,২১,৯২৫ জন হিন্দু, ২৭,৯৯৬ জন খ্রিস্টান, ১,০৯৩ জন বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের প্রায় ৩৪,৮০৬ জন লোক বাস করে।[৫] দিনাজপুর জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২%। নারী ও পুরুষের অনুপাত ১:১.০২।

দিনাজপুর জেলায় সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহলী, মালপাহাড়ী, কোল প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।[৫]

শিক্ষা
দিনাজপুর জেলার শিক্ষার গড় হার ৪৫.৭%। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৫১% এবং মহিলাদের মধ্যে ৪০%। দিনাজপুরে ১৭১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টি কমিউনিটি বিদ্যালয়, ২৯টি এনজিও স্কুল, ১০টি কিন্ডারগার্টেন, ৩৫১টি মাদ্রাসা, ৬১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৮টি কলেজ, ১টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, ১ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ১টি ভেটেরিনারি কলেজ ১০টি ভোকেশনাল ও অন্যান্য কেন্দ্র এবং ১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।[৫]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়:
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
মেডিকেল ও নার্সিং কলেজ:
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ
দিনাজপুর নার্সিং কলেজ
কলেজ:
দিনাজপুর সরকারি কলেজ (১৯৪২),
দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ
দিনাজপুর সরকারি সিটি কলেজ (১৯৬৬);
ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ (১৯৬৩)
পার্বতীপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪)
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ (1972)
সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৬৭),
আমবাড়ী ডিগ্রী কলেজ
আমবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজ
বিরামপুর সরকারি কলেজ
পার্বতীপুর আদর্শ কলেজ (১৯৬৪),
বিরল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২),
দাউদপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২),
হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪),
খোলাহাটি ডিগ্রি কলেজ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়:
উইলিয়াম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯),
কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়, বীরগঞ্জ
দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪),
মেহের হোসেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল (চিরিরবন্দর, দিনাজপুর)
আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, চিরিরবন্দর (২০০০)
দিনাজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯),
জুবিলি হাইস্কুল (১৮৮৭),
মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩),
রাজারামপুর এসইউ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩),
মোল্লাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩),
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়, বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাস, খোলাহাটি, পার্বতীপুর(১৯৯৪)
পার্বতীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪),
আমবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
আমবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
রুদ্রানী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫),
সুজাপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯),
ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০),
পলাশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১),
সেতাবগঞ্জ আইডিয়াল একাডেমী (২০০০),
জ্ঞানাঙ্কুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫),
সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭),
দিনাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০)
একইর মঙ্গলপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০),
কাহারোল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০),
হাবড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২),
ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট স্কুল ও কলেজ (১৯৪০),
রানীগঞ্জ দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫),
নুরুলহুদা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১),
নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯),
বীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২),
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট, বিরামপুর (১৯৯৪);
সেতাবগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮বোচাগঞ্জ দিনাজপুর )
প্রাথমিক বিদ্যালয়:

হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৪২),
চেহেল গাজি শিক্ষা নিকেতন,
চাকাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বীরগঞ্জ
শিয়ালা প্রাথমিক বিদ্যালয়;
সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৮)
মাদ্রাসা:
দিনাজপুর নূরজাহান আলিয়া মাদ্রাসা
আমবাড়ী দ্বী-মূখী ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা
বীরগঞ্জ ফাযিল মাদরাসা
জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া আনওয়ারুল উলুম (১৯৬০)
জুড়াই ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫২),
ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৭২)
বিরামপুর ফাজিল মাদ্রাসা।
দেওগাঁ ইমাম বখ্শ ফাযিল ডিগ্রি মাদরাসা (প্রথম ১৯১৯ সালে, দ্বিতীয় ১৯৬৯ সালে )
সেতাবগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা
উথরাইল ফাযিল মাদ্রাসা
সাক্ষরতার আন্দোলন
দিনাজপুরে আলোর দিশারী নামে একটি সাক্ষরতার আন্দোলন চালু আছে।
নদ-নদী
দিনাজপুর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত হলেও অনেক নদী ও পানি সম্পদের অধিকারী। চাষাবাদের জন্য দিনাজপুরের মোহনপুরে আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম দেওয়া হয়েছে।

চিরিরবন্দরের কাছে রেলসেতু থেকে তোলা কাঁকড়া নদীর দৃশ্য।

ছোট যমুনা নদী
দিনাজপুর জেলা দিয়ে ২৬টিরও বেশি নদী প্রবাহিত হয়েছে।[১৪] নদীগুলো হচ্ছে-

আত্রাই নদী
কাঁকড়া নদী
কাঁচমতি নদী
করতোয়া নদী
ইছামতি নদী
খড়খড়িয়া নদী
ছোট যমুনা নদী
টাঙ্গন নদী
ঢেপা নদী
পুনর্ভবা নদী
যমুনেশ্বরী নদী
আখিরা-মাচ্চা নদী
করতোয়া নিম্ন নদী
কালা নদী
গভেশ্বরী নদী
ঘিরনাই নদী
চিরি নদী
তুলসীগঙ্গা নদী
নর্ত নদী
নলশীসা নদী
পাথরঘাটা নদী
বেলান নদী
ভুল্লী নদী
মাইলা নদী
রাক্ষসিনী-তেঁতুলিয়া নদী
হারাবতী নদী
ঢেপা নদী
এছাড়াও দিনাজপুরে আরো অনেক নাম না জানা ছোট নদী আছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য
দিনাজপুর জাদুঘর দিনাজপুরের মহারাজার বিভিন্ন নিদর্শনের স্মারকবাহী একটি জাদুঘর। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহশালা। এছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গাগুলো হল-

অরুণ ধাপ
বার পাইকের গড়
ঘোড়াঘাট দুর্গ
প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির, কাহারোল
কালিয়া জীউ মন্দির
রামসাগর
মোহনপুর রাবার ড্রাম
রামসাগর দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট দিঘি। এটি বাংলাদেশে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় দিঘি। তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার।
ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ (রাজত্বকাল: ১৭২২-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) এই রামসাগর দিঘি খনন করেছিলেন।

লোকসংস্কৃতি
লোকসংগীত
দিনাজপুরে মূলত ভাওয়াইয়া, কীর্তন, পাঁচালি, মেয়েলি গীত, গোরক্ষনাথের গান, চড়কের গান, বাউল গান, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, ছিলকা, হেয়ালি, ধাঁধা, জারিগান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচিত।

গণমাধ্যম
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী
দৈনিক পত্রিকা:
দৈনিক উত্তরা
দৈনিক প্রতিদিন
দৈনিক উত্তর বাংলা
দৈনিক তিস্তা
দৈনিক আজকের দেশবার্তা
দৈনিক জনমত
দৈনিক উত্তরবঙ্গ
দৈনিক আজকের প্রতিভা
দৈনিক অন্তর কণ্ঠ
দৈনিক উত্তরাঞ্চল
দৈনিক খবর একদিন
*দৈনিক পত্রালাপ
সাপ্তাহিক:
সাপ্তাহিক অতঃপর
সাপ্তাহিক আজকের বার্তা
সাপ্তাহিক ফলোআপ
সাপ্তাহিক বিরামপুর বার্তা
মাসিক:
নওরোজ (অবলুপ্ত)।
অনলাইন পত্রিকা:
দিনাজপুর নিউজ
উত্তরের কণ্ঠ
দিনাজপুর নিউজ২৪
সবুজ বাংলা নিউজ
দিনাজপুর টাইমস
আজকের দিনাজপুর
দিনাজপুর বার্তা২৪
দিনাজপুর২৪
দিনাজপুর টিভি
ইনফো দিনাজপুর
নবাবগঞ্জ নিউজ ২৪ ( অন লাইন)
ক্রীড়াঙ্গন
দিনাজপুরে ক্রিকেট খেলা বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন খেলার আয়োজনের জন্য শহরে একটি স্টেডিয়াম আছে যা দিনাজপুর স্টেডিয়াম নামে পরিচিত। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল এর খেলোয়াড় লিটন দাস দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন। আঞ্চলিকভাবে হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, বউ ছি, লুকোচুরি খেলা হয়।

অর্থনীতি
দিনাজপুর একটি কৃষিনির্ভর জেলা। জেলার অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলো কৃষি।

দিনাজপুরে আলু চাষ
জনগোষ্ঠীর মোট আয়ের ৬৩.৯০% আসে কৃষিখাত থেকে। দিনাজপুর জেলার মোট আয়ের ৬.২৯% ও ৩.৯০% আসে যথাক্রমে অকৃষি শ্রমিক ও শিল্পখাত থেকে। কৃষি ও শিল্প ছাড়াও অন্যান্য খাতের আয়- ব্যবসা ১২.৮৯%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩.৩৫%, চাকরি ৬.৫৮%, নির্মাণ ৩.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট ও রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ৫.৩২%।

রংপুরের ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন গ্রামে মোট ৩০৮ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৮৭ একর জমি নামমাত্র মূল্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব জেলা প্রশাসনের খাস জমি। হুকুমদখল আইন ২০১৭ মোতাবেক শিগগিরই বাকি ২২১ একর জমি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে।

কৃষি
দিনাজপুরের মাটি লিচু উৎপাদনের জন্য খুবই উপযুক্ত। লিচু ছাড়াও দিনাজপুর জেলা ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও কালিজিরা ধান দেশে-বিদেশে সমাদৃত। দিনাজপুরকে নিয়ে একটি বাংলা প্রবাদ রয়েছে-

গোলা ভরা ধান
গোয়াল ভরা গরু
পুকুর ভরা মাছ

দিনাজপুরের প্রধান শস্য হলো ধান। সমগ্র বাংলাদেশের চালের চাহিদার একটি বড় অংশ আসে দিনাজপুর থেকে। এছাড়াও দিনাজপুরে প্রচুর গম, ভুট্টা, আলু, বেগুন ও টমেটো-ও উৎপাদিত হয়। ফলের মধ্যে লিচু, আম, কলা, কাঁঠাল ও জাম উৎপাদিত হয়। দিনাজপুরের আম ও লিচু উৎকৃষ্ট মানের। এছাড়া দিনাজপুর জেলার মাশিমপুরের বেদেনা লিচু বিশ্ববিখ্যাত। বর্তমানে এ লিচু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

শিল্প ও বাণিজ্য
অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষি হওয়ায় দিনাজপুর জেলায় গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। দিনাজপুর জেলার শিল্পকারখানার মধ্যে সেতাবগঞ্জ চিনি কল লিমিটেড, দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড অন্যতম। ধান দিনাজপুরের প্রধান শস্য হওয়ায় এখানে প্রায় ১০০টির মতো স্বয়ংক্রিয়, আধা-স্বয়ংক্রিয় চালকল ও অসংখ্য চাতাল-নির্ভর (হাস্কিং) চালকল রয়েছে। এছাড়া বিরলে একটি পাটকল রয়েছে। বিরামপুর উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছিল বাংলাদেশের সর্বপ্রথম তেল শোধনাগার। বর্তমানে তা অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। দিনাজপুরে নিম্নোক্ত শিল্প বর্তমানে চালু আছে।[১৫]

ক্রমিক প্রতিষ্ঠান সংখ্যা
১ অটোমেটিক চাউল কল ৬১টি
২ সেমি অটোমেটিক চাউল কল ৩৫টি
৩ চাতাল চাউল কল ১৮৬১টি
৪ মেজর চাউল কল ১২টি
৫ অটোমেটিক ফ্লাওয়ার মিল ৬টি
৬ হিমাগার ৯টি
৭ জুট মিল ১টি
৮ লজেন্স ফ্যাক্টরী ২টি
৯ গার্মেন্টস ১টি
১০ মিশ্র সার ফ্যাক্টরী ১টি
১১ পোলট্রি হ্যাচারী ৪টি
খনিজ সম্পদ

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি
প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে দিনাজপুরে রয়েছে পিট-কয়লার খনি। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে তিনটির অবস্থান দিনাজপুরে- বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দিঘীপাড়া। বর্তমানে শুধু বড়পুকুরিয়ায় মাটির নিচ থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০০ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি স্থাপনের কাজ স্থানীয়দের বাঁধার মুখে বন্ধ হয়ে যায়।[১৬] বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদিত কয়লা ব্যবহার করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সাম্প্রতিককালে হাকিমপুরে লৌহ খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। হাকিমপুরের ইসবপুর গ্রামে প্রায় ছয় বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে ২০১৯ সালে এটি আবিষ্কার করা হয়। খনিতে লোহার পাশাপাশি ক্রোমিয়াম, নিকেল উপস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এমনকি খনিটিতে স্বর্ণও পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।

চিত্তাকর্ষক স্থান

কান্তনগর মন্দির

রামসাগর
আওকরা মসজিদ,
আনন্দ সাগর,
কান্তনগর মন্দির,
কালিয়া জীউ মন্দির,
কোরাই বিল,
গৌরগোবিন্দ,
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি,
চেহেলগাজী মাজার,
জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন,
দিনাজপুর ঈদগাহ ময়দান,
দিনাজপুর জাদুঘর,
দিনাজপুর জিলা স্কুল,
দিনাজপুর রাজবাড়ি,
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান,
নয়াবাদ মসজিদ,
রাবারড্যাম,
নওপাড়া আদর্শ গ্রাম,
পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন,
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি,
বারদুয়ারি,
বিরামপুর জমিদার বাড়ি,
মাতাসাগর,
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর,
রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি,
রামসাগর,
রামসাগর জাতীয় উদ্যান,
রুদ্রপুর দীপশিখা বিদ্যালয়,
সিংহ দরওয়াজা,
সিংড়া জঙ্গল,
সীতা কুঠুরী,
সীতাকোট বিহার,
সীমান্ত শিখা ক্লাব, হাকিমপুর,
সুখসাগর,
স্বপ্নপুরী,
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
হাবড়া জমিদার বাড়ি,
হিলি স্থলবন্দর।
যোগাযোগ ব্যবস্থা

দিনাজপুরে মহাসড়ক
দিনাজপুর রাজধানী ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সাথে সড়ক ও রেলপথে দিনাজপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো।

রেল যোগাযোগ
ঢাকাগামী ট্রেনের মাধ্যমে খুব সহজেই দিনাজপুর সদর সহ নানা উপজেলায় যাওয়া যায়। দিনাজপুরের গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশনগুলো হল-

দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন
বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশন
ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন
হিলি রেলওয়ে স্টেশন
চিরিরবন্দর রেলওয়ে স্টেশন
ডাঙাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন
সেতাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
মঙ্গলপুর রেলওয়ে স্টেশন
কাঞ্চন রেলওয়ে স্টেশন
কাউগাঁ রেলওয়ে স্টেশন

দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর অবিভক্ত ভারতের রেলওয়ে ও বর্তমান বাংলাদেশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কেননা ব্রড গেজ ও মিটার গেজের সংমিশ্রণে বাংলাদেশে একটি মাত্র চার লাইনের রেল জংশন রয়েছে, তা হলো পার্বতীপুর।

পার্বতীপুর জংশন
ব্রিটিশ সময়কালে উপমহাদেশে রেললাইন স্থাপনের চিন্তার প্রাথমিক পর্যায়েই যুক্ত হয়ে যায় পার্বতীপুরের নাম। কেননা ব্রিটিশ রাজধানী কলকাতার রেল রুটের সঙ্গে বাংলাদেশের আর যে ক’টি রেলস্টেশনের নাম উল্লেখ ছিল, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল পার্বতীপুর। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রেলপথ স্থাপনের জন্য বর্তমান বাংলাদেশের দর্শনা, সান্তাহার, পার্বতীপুর ও চিলাহাটিকে সংযোগ করা হয়। ১৮৭৬ সালে কলকাতা থেকে পার্বতীপুর হয়ে সরাসরি শিলিগুড়ি যাওয়া যেত। পরবর্তীতে ভারতের কোচবিহারের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য পার্বতীপুরকে বেছে নেয়া হয়। নর্থ বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ের আওতায় মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ১৮৭৯ সালে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত এবং বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা রেল স্থাপনের মাধ্যমে পার্বতীপুর স্টেশন থেকে পার্বতীপুর জংশনে রূপান্তরিত হয়।

তখন ব্রিটিশদের কাছে ভারতীয় উপমহাদেশে পার্বতীপুরের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। আর এ কারণে বিহারের সঙ্গে পার্বতীপুরের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আসাম বিহার স্টেট রেলওয়ের আওতায় ১৮৮৪ সালে বিহারের কাটিহার-পার্বতীপুর রেলপথ সংযুক্ত হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হারিয়ে ফেলে। তাই বলে পার্বতীপুরের গুরুত্ব কমেনি। বর্তমান বাংলাদেশেও পার্বতীপুর জংশনের গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে পার্বতীপুর জংশনে প্লাটফর্ম আছে পাঁচটি। বর্তমানে সারা দিনে ৫২টি ট্রেন যাতায়াত করে।

বাংলাদেশে চারটি লোকোমোটিভ (রেল ইঞ্জিন) কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান লোকোমোটিভ কারখানাই হলো পার্বতীপুরে, যার নাম কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কেলোকা)। পার্বতীপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে এটি খুব বেশি দূরে নয়। এটা রেলের ইঞ্জিন তৈরির কারখানা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনকে নতুনভাবে মেরামত করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা আসেন সরেজমিন ক্রিয়া দর্শন করতে, এছাড়া পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা সরেজমিন প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন। এখানে প্রবেশাধিকার সীমিত, তাই যাওয়ার আগে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

পার্বতীপুরে লোকোশেড, ডিজেল শেড রয়েছে, যা রেলের প্রতি আগ্রহের বড় ধরনের খোরাক জোগাবে। স্টেশন এলাকার পেছন দিকেই রয়েছে সাহেবপাড়া, বাবুপাড়া। এখানে রেলের সাহেব বাবুরা থাকতেন। এখনো বড় কর্তারা এখানে বসবাস করেন। ব্রিটিশ সময়কালে বহু খ্যাতনামা ব্যক্তির পা পড়েছে এ দিনাজপুরে। পার্বতীপুর স্টেশনে চাকরি করেছেন বিশ্বখ্যাত ফুটবলার জাদুকর সামাদ। তার জন্য একটি বিশেষ পদ সৃষ্টি করে ব্রিটিশ রেল কর্তৃপক্ষ। প্লাটফর্ম সুপারভাইজার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এই ফুটবলের জাদুকরের সমাধিসৌধ রয়েছে পার্বতীপুরের ইসলামপুর এলাকায়। উপমহাদেশের ফুটবলে এখন পর্যন্ত সামাদ ছাড়া আর কাউকে ‘ফুটবলের জাদুকর’ বলা হয়নি। ১৯৩৬ সালে তিনি ভারতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকাগামী আন্তঃনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও নীলসাগর এক্সপ্রেস দিনাজপুর দিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া পঞ্চগড় এক্সপ্রেস দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। সবগুলো ট্রেনেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ও স্লিপিং কক্ষ রয়েছে। বিকল্প হিসাবে বাসেও যাওয়া যায়। ঢাকার কলেজগেট থেকে হক এন্টারপ্রাইজের বাস ছাড়াও হানিফ, নাবিল ও কয়েকটি কোম্পানির বাস ছেড়ে যায়।

সড়কব্যবস্থা

দিনাজপুরের সড়ক
ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের মাধ্যমে দিনাজপুর ও এর সকল উপজেলা রাজধানী ঢাকা ও সারা দেশের সাথে যুক্ত হয়েছে। এন৫০৮ দিনাজপুরের মহাসড়ক কোড।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী ৫১৪০টি মসজিদ[১৭] এবং ২২২টি মন্দির[১৮] রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়[১৯] ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় দিনাজপুরের গোরে-শাহ ঈদগাহ ময়দানে। বর্তমানে এটি দিনাজপুর ঈদগাহ ময়দান নামে সারা দেশে আলোচিত। এখানে একসাথে ৫ লক্ষাধিক মুসল্লি একসাথে সালাত আদায় করে। এছাড়াও এখানে নিম্নোক্ত বিখ্যাত ধর্মালয় বিদ্যমান-

কান্তজীর মন্দির
সুরা মসজিদ
নয়াবাদ মসজিদ
চেহেলগাজী মাজার
কুড়িয়াল মাজার আমবাড়ী
যদিও বা দিনাজপুরের ইসলাম মতাদর্শী বেশি তবুও দিনাজপুরে সকল ধর্মালম্বী অসাম্প্রদায়িক একটি পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে। হিন্দু কিংবা সাঁওতাল প্রত্য়েক জাতির নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।

Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. required fields are marked *

Success! Thanks for your comment. We appreciate your response.
You might have left one of the fields blank, or be posting too quickly