দিনাজপুরের সীতাকোট বিহার

Md Hammim Islam Joy 10/30/2024 No Comments

দিনাজপুরের সীতাকোট বিহার

দিনাজপুরের সীতাকোট বিহার

ভূমিকা

 সীতাকোট বিহার বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার। ইতিহাস এবং প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিহারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন যা বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ।

সীতাকোট বিহারের অবস্থান ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

 নওয়াবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত এই বিহারটির অবস্থান এমনভাবে যে এটি স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। সীতাকোট বিহার একটি বৌদ্ধ মঠ বা বিহার হিসেবে সুপরিচিত, এবং এটি প্রায় বর্গাকৃতির একটি বিশাল স্থাপত্যিক কাঠামো।

বিহারটির স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য

উত্তর ও দক্ষিণ বাহুর গঠন

 সীতাকোট বিহারের গঠনপ্রকৃতির মধ্যে দেখা যায় যে এর উত্তর এবং দক্ষিণ বাহুগুলো বাহির দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল।

তোরণ কমপ্লেক্স ও প্রহরীকক্ষ

 বিহারটির প্রবেশদ্বারের অংশে রয়েছে তোরণ কমপ্লেক্স এবং দুটি প্রহরীকক্ষ, যা প্রবেশপথকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো।

বিহারের কক্ষসমূহের বিন্যাস

কক্ষের সংখ্যা ও আকৃতি 

সীতাকোট বিহারে মোট ৪১টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর বাহুতে ৮টি কক্ষ এবং বাকি তিন বাহুতে ১১টি করে কক্ষ বিদ্যমান।

কেন্দ্রীয় কক্ষ এবং পূজার মূর্তি 

বিহারের পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রীয় কক্ষত্রয় অন্য সাধারণ কক্ষগুলোর চেয়ে বড় আকৃতির। প্রতিটি কেন্দ্রীয় কক্ষে একটি করে ইটের বেদি রয়েছে, যেখানে পূজার মূর্তি স্থাপন করা হতো। ধারণা করা হয়, দক্ষিণ দিকের কক্ষটি প্রধান মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

অভ্যন্তরীণ টানা বারান্দা

 বিহারের অভ্যন্তরে ২.৫৯ মিটার প্রশস্ত একটি টানা বারান্দা রয়েছে যা কক্ষগুলোর সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হতো।

বিহারের প্রবেশদ্বার ও পরিপার্শ্ব 

পূর্ব বাহুর উত্তরাংশে পেছনের দেয়াল ভেদ করে একটি সম্পূরক প্রবেশপথ ছিল, যা সুরক্ষা এবং ব্যবহারের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

প্রধান মন্দির এবং প্যাভিলিয়ন

 বিহারের দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রীয় কক্ষটি ছিল প্রধান মন্দির।

বিহারের ছাদ নির্মাণ পদ্ধতি 

সীতাকোট বিহারের ছাদ নির্মাণে চুন, সুরকি, এবং কাঠের কাঠামোর ব্যবহার করা হয়েছে, যা এটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন ও আবিষ্কৃত মূর্তিসমূহ

এ বিহারে ব্রোঞ্জনির্মিত বোধিসত্ত্ব পদ্মপাণি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী মূর্তি পাওয়া গেছে।

বিহার ভবনের অন্যান্য স্থাপনা

 বিহারের দক্ষিণ দিকে মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত পাঁচটি কক্ষ রয়েছে যা শৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়।

সীতাকোট বিহারের ইতিহাস ও নির্মাণকাল

 বিভিন্ন স্তরবিন্যাস পদ্ধতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বিহারটির নির্মাণকাল সম্পর্কে অনেকটা অনুমান করতে সক্ষম হয়েছেন।

আকার ও আয়তনে ভাসু বিহারের সাদৃশ্য

 বগুড়ায় অবস্থিত ভাসু বিহারের সঙ্গে সীতাকোট বিহারের আকার এবং আয়তনে বেশ মিল রয়েছে।

সীতাকোট বিহার এবং অন্যান্য বিহারগুলোর তুলনা

এখানে সীতাকোট বিহারে পোড়ামাটির ফলক নেই, যা পাহাড়পুর বা শালবন বিহারের মতো অন্যান্য বিহারের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ভিন্নতা এনে দিয়েছে।

সীতাকোট বিহারের গুরুত্ব ও সংরক্ষণ প্রচেষ্টা

সীতাকোট বিহার আমাদের বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

উপসংহার 

সীতাকোট বিহার বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক স্থাপনা যা বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রশ্নাবলী (FAQ)

সীতাকোট বিহারের অবস্থান কোথায়?

সীতাকোট বিহার বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

বিহারটির মোট কক্ষসংখ্যা কত?

সীতাকোট বিহারে মোট ৪১টি কক্ষ রয়েছে।

সীতাকোট বিহারের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

এটি প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ এবং এর মধ্যে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা, কক্ষ ও পূজার স্থান।

এ বিহারের নির্মাণকালে কোনো মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে?

হ্যাঁ, এখানে ব্রোঞ্জনির্মিত বোধিসত্ত্ব পদ্মপাণি এবং মঞ্জুশ্রী মূর্তি পাওয়া গেছে।

সীতাকোট বিহার সংরক্ষণ কার্যক্রমের প্রয়োজন কেন?

এটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে, তাই সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।

 

আরও পড়ুন->>>

দিনাজপুরের লোক সংস্কৃতি

দিনাজপুরের বিখ্যাত খাবার