দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল

Nurun Nahar Saju 11/15/2024 No Comments

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ইতিহাস

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি প্রধান সরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি সারা জেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে এবং এটি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান যা নানা ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

হাসপাতালের ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা:

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে। এটি শুরুতে একটি ছোট আকারের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, এটি আরও আধুনিকায়িত হয় এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তার পরিধি বৃদ্ধি পায়। এখন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত, যেখানে সাধারণ চিকিৎসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।

সেবার ধরন ও চিকিৎসা সুবিধা:

 বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডাক্তার। এখানে বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ওটি (অপারেশন থিয়েটার), এবং আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। অন্তর্বিভাগের মাধ্যমে রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা এবং সেবা দেওয়া হয়। জরুরি বিভাগটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, যা রোগীদের তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে সক্ষম।হাসপাতালে যে ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে গাইনোকলজি, অর্থোপেডিকস, শিশু বিভাগ, চর্ম ও যৌন রোগ, হৃদরোগ, এবং চক্ষু বিভাগ। প্রতিটি বিভাগে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন যারা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করেন।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা:

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে একটি দক্ষ দল রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নার্সিং স্টাফও পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। তারা রোগীদের পরিচর্যা ও চিকিৎসায় সর্বোচ্চ মনোযোগ প্রদান করে থাকেন।

অবকাঠামো ও আধুনিকায়ন:

হাসপাতালটির অবকাঠামো বেশ উন্নত। এতে আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা থাকায় রোগ নির্ণয় দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হয়। সম্প্রতি হাসপাতালের কিছু অংশ আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়েছে যাতে রোগীদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করা যায়। 

রোগী সংখ্যা ও পরিষেবা:

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী আসেন। জেলা ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তাই এই হাসপাতালটি সাধারণত ব্যস্ত থাকে। রোগীদের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত শয্যা ও অন্যান্য সুবিধা থাকলেও অনেক সময় অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের চেষ্টা করে।

চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি। তবে সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে হাসপাতালের অবকাঠামো ও পরিষেবা আরও আধুনিক ও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে রোগীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়।দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে।

ইতিহাস:

১৯৭৮-৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বগুড়া, কুমিল্লা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, নোয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮০-৮১ সালে কুমিল্লা, খুলনা, পাবনা এবং আইপিএমজিআর (ঢাকা) – এ সেখানকার মেডিকেল কলেজগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে সেই মেডিকেল কলেজগুলোর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের দেশে বিদ্যমান আটটি মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। আবার ১৯৯১-৯২ সালে সরকার আবারও আরও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং আরও ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য উক্ত বছরে সরকার দিনাজপুর, বগুড়া, খুলনা, ফরিদপুর এবং কুমিল্লাতে প্রতিটিতে ৫০ জন ছাত্র ভর্তি করানোর মাধ্যমে আরোও ৫টি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ১৯৯২ সালের ১৬ই আগস্ট দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ নামে কার্যক্রম শুরু করে এবং ১লা জুলাই ২০০০ সালে দিনাজপুর শহরে আনন্দ সাগর এলাকায় নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ৭ই মার্চ ২০১০ সালে কলেজের নিজস্ব ভবনে ১৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তার কার্যক্রম স্থানান্তর করে।২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কলেজটিকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পরিবর্তন করে এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর নামকরণ করে।২০২৪-এর ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের (চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখা) এর প্রজ্ঞাপনের দ্বারা কলেজটির নাম পুনরায় “দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ” হয়।

মসজিদ:

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খেলার মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দুটি তলা ভবন বিশিষ্ট মসজিদ অবস্থিত।

আবাসন সুবিধা:

ছেলেদের হলের নাম ডাঃ মোঃ ইউসুফ আলী হল। এটি খেলার মাঠের পাশে দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন।মেয়েদের হলের নাম ডাঃ মোঃ তৈয়বুর রহমান হল। এটি তিনটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন। এটিতে পূর্ব ভাগ, পশ্চিম ভাগ এবং মাঝের ভাগ নামে তিনটি অংশ রয়েছে।ইন্টার্ন ডাক্তারদের জন্য দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। যার মধ্যে একটি ছেলেদের জন্য এবং একটি মেয়েদের জন্য। মূল হাসপাতালের পিছনে আধুনিক সুবিধাসহ ভবন।নার্সিং ইনস্টিটিউটের কাছে প্রশিক্ষণার্থী নার্সদের জন্য দুটি হোস্টেল রয়েছে। শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স এবং অতিথিদের জন্য অনেকগুলো ভবন রয়েছে।

দিনাজপুর নার্সিং কলেজ:

হাসপাতালের সাথে একটি আধুনিক সুবিধা বিশিষ্ট নার্সিং কলেজ রয়েছে। এটি তরুণ নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়। হাসপাতালের কাছে নার্সদের জন্য হোস্টেলও রয়েছে।

হাসপাতাল:

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম হাসপাতাল। এটি একটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। হাসপাতালে ১৭ টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। যার মধ্যে ১২ টি সাধারণ এবং দুটি জরুরি অপারেশন থিয়েটার। হাসপাতালটি ক্যান্সার, ইউরোলজি এবং রেডিওথেরাপিসহ কয়েকটি নতুন বিভাগ চালু করেছে। হাসপাতাল ভবনে একটি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে। হাসপাতালে ১০০০ জনেরও বেশি রোগীর সেবা দিবার ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সরকার এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ শয্যার বার্ন ইউনিট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিজিটি প্রশিক্ষণও এই হাসপাতালে দেওয়া হয়।

আরো জানতে – >>>

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল