এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Nurun Nahar Saju 11/16/2024 No Comments

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর, উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। এই হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি শুধু দিনাজপুর জেলা নয়, আশে পাশের অন্যান্য জেলাগুলোর মানুষের জন্যও চিকিৎসার সেবা প্রদান করে থাকে।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:

প্রতিষ্ঠা ১৯৯২ সালে হয়েছিল, যা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা এম আব্দুর রহিমের নামে এই কলেজের নামকরণ করা হয়। শুরু থেকে এই কলেজটি উত্তরবঙ্গের মেডিকেল শিক্ষার উন্নয়ন ও চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

অবকাঠামো এবং সেবাসমূহ:

এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৫০০-শয্যার ক্ষমতা রয়েছে। এর আধুনিক অবকাঠামো এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এটি রোগীদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে সক্ষম। এখানে বিভিন্ন ওয়ার্ড যেমন, সার্জারি, মেডিসিন, পেডিয়াট্রিকস, গাইনোকলজি, অর্থোপেডিকসসহ অন্যান্য বিভাগ রয়েছে। হাসপাতালে উন্নত ডায়াগনস্টিক সুবিধা যেমন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া, ব্লাড ব্যাংক, ফার্মেসি, ওএনকোলজি ইউনিট এবং আইসিইউর মতো বিশেষায়িত বিভাগও রয়েছে। এই সুবিধাগুলো নিশ্চিত করে যে, রোগীদের প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা এক জায়গাতেই পাওয়া যায় এবং দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডাক্তার লিস্ট পাবেন।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান শিক্ষায় উচ্চমানের শিক্ষাদান করে। এখানকার শিক্ষার্থীরা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও প্রয়োগ সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করে। মেডিকেল ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিতভাবে সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এগুলো শিক্ষার্থীদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে। মেডিকেল গবেষণায়ও প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

মানবিক সেবার দিক:

এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানবিক সেবার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। এখানে বিনামূল্যে এবং কম খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়, যা সমাজের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ২৪/৭ সেবা প্রদান করে, যা তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সক্ষম।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

যদিও হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে স্টাফের সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নতমানের সরঞ্জামের প্রয়োজন এবং পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতে হাসপাতালটি এর সেবার মান আরও উন্নত করতে উন্নত প্রযুক্তি, আরও প্রশিক্ষিত কর্মী এবং গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে।

সার্বিকভাবে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুর এবং উত্তরবঙ্গের জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একটি বিশ্বস্ত কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এর সেবা, শিক্ষাগত কার্যক্রম এবং মানবিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে একটি অনন্য ভূমিকা পালন করছে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল যা ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চিকিৎসা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি মেডিকেল কলেজ।১৯৭৮-৭৯ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বগুড়া, কুমিল্লা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, নোয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৮০-৮১ সালে কুমিল্লা, খুলনা, পাবনা এবং আইপিএমজিআর (ঢাকা) – এ সেখানকার মেডিকেল কলেজগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে সেই মেডিকেল কলেজগুলোর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের দেশে বিদ্যমান আটটি মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। আবার ১৯৯১-৯২ সালে সরকার আবারও আরও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং আরও ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য উক্ত বছরে সরকার দিনাজপুর, বগুড়া, খুলনা, ফরিদপুর এবং কুমিল্লাতে প্রতিটিতে ৫০ জন ছাত্র ভর্তি করানোর মাধ্যমে আরোও ৫টি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ১৯৯২ সালের ১৬ই আগস্ট দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ নামে কার্যক্রম শুরু করে এবং ১লা জুলাই ২০০০ সালে দিনাজপুর শহরে আনন্দ সাগর এলাকায় নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ৭ই মার্চ ২০১০ সালে কলেজের নিজস্ব ভবনে ১৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তার কার্যক্রম স্থানান্তর করে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কলেজটিকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পরিবর্তন করে এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর নামকরণ করে।২০২৪-এর ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের (চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখা) এর প্রজ্ঞাপনের দ্বারা কলেজটির নাম পুনরায় “দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ” হয়।

মসজিদ:

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খেলার মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে দুটি তলা ভবন বিশিষ্ট মসজিদ অবস্থিত।

আবাসন সুবিধা:

ছেলেদের হলের নাম ডাঃ মোঃ ইউসুফ আলী হল। এটি খেলার মাঠের পাশে দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন।মেয়েদের হলের নাম ডাঃ মোঃ তৈয়বুর রহমান হল। এটি তিনটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন। এটিতে পূর্ব ভাগ, পশ্চিম ভাগ এবং মাঝের ভাগ নামে তিনটি অংশ রয়েছে।ইন্টার্ন ডাক্তারদের জন্য দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। যার মধ্যে একটি ছেলেদের জন্য এবং একটি মেয়েদের জন্য। মূল হাসপাতালের পিছনে আধুনিক সুবিধাসহ ভবন।নার্সিং ইনস্টিটিউটের কাছে প্রশিক্ষণার্থী নার্সদের জন্য দুটি হোস্টেল রয়েছে। শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স এবং অতিথিদের জন্য অনেকগুলো ভবন রয়েছে।

দিনাজপুর নার্সিং কলেজ:

হাসপাতালের সাথে একটি আধুনিক সুবিধা বিশিষ্ট নার্সিং কলেজ রয়েছে। এটি তরুণ নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়। হাসপাতালের কাছে নার্সদের জন্য হোস্টেলও রয়েছে।

হাসপাতাল:

 বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম হাসপাতাল। এটি একটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। হাসপাতালে ১৭ টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। যার মধ্যে ১২ টি সাধারণ এবং দুটি জরুরি অপারেশন থিয়েটার। হাসপাতালটি ক্যান্সার, ইউরোলজি এবং রেডিওথেরাপিসহ কয়েকটি নতুন বিভাগ চালু করেছে। হাসপাতাল ভবনে একটি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রয়েছে। হাসপাতালে ১০০০ জনেরও বেশি রোগীর সেবা দিবার ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে সরকার এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ শয্যার বার্ন ইউনিট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিজিটি প্রশিক্ষণও এই হাসপাতালে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের অধীনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান:

  • দিনাজপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল
  • জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল
  • ডায়াবেটিক হাসপাতাল
  • বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল
  • অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল
  • এমসিএইচসি কেন্দ্র
  • স্কুল স্বাস্থ্য কেন্দ্র
  • নিউক্লিয়ার মেডিসিন কেন্দ্র, দিনাজপুর
  • বক্ষব্যাধি ক্লিনিক
  • কুষ্ঠ ক্লিনিক

আরও দেখুন

বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজ সমূহের তালিকা

দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল