দিনাজপুর সিংড়া জাতীয় উদ্যান

Badhon Roy 11/06/2024 No Comments

দিনাজপুর সিংড়া জাতীয় উদ্যান

দিনাজপুর সিংড়া জাতীয় উদ্যান

সিংড়া জাতীয় উদ্যান উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। স্থানীয়ভাবে এটি সিংড়া শালবন নামে পরিচিত। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কি.মি. উত্তরে এবং বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৫ কি.মি. দূরে ভোগনগর ইউনিয়নে এর অবস্থান। এই বনভূমির মোট আয়তন ৩৫৫ হেক্টর এবং এর মধ্যে জাতীয় উদ্যানের পরিমাণ (সংরক্ষণ) ৩০৫.৬৯ হেক্টর। ডালাগ্রাম, চাউলিয়া, সিংড়া ও নর্তনদী এ ৪টি মৌজায় সিংড়া জাতীয় উদ্যান বিস্তৃত। প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১০ই অক্টোবর বনবিভাগ এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।

সিংড়া জাতীয় উদ্যানের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে নর্ত নদী। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে একটি ছোট পরিসরের রেস্ট হাউজ ও দুটি পিকনিক স্পট রয়েছে। শীত মৌসুমে এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সিংড়া শালবনের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে আরডিআরএস বাংলাদেশ এর সহযোগীতায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে।

ইতিহাস

সিংড়া বনকে ১৮৮৫ সালে অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বনবিভাগের অধীনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১০ই অক্টোবর উত্তরাঞ্চলে অন্য তিনটি বনাঞ্চল এর সাথে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সিংড়া মৌজার নামানুসারে এই সংরক্ষিত বনের নামকরণ করা হয় সিংড়া জাতীয় উদ্যান। এটি সিংড়া শালবন নামেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত।

জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য

উদ্ভিদ

সিংড়া জাতীয় উদ্যানে মূলত পত্রঝরা শালবৃক্ষের প্রাধান্য দেখা যায়। তবে শাল ছাড়াও এখানে জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু,গুটিজাম, হরতকি, বয়রা, আমলকি এবং বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতা-গুল্ম রয়েছে।

স্তন্যপায়ী

এক সময়ে এই বনে বাঘ, নীলগাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য জীবজন্তুর আবাস ছিল। তবে বনভূমি ধ্বংস ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে এ বনভূমি থেকে জীবজন্তু হারিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে এই বনে খরগোশ, শিয়াল, সাপ, বেজি সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গের দেখা পাওয়া যায়।

পাখি

শকুন,দে‌শি শুমচা, হাঁড়িচাচা, ব্রঞ্জ ফিঙ্গে, নীল গলা বসন্ত বৌরি, বড় তিত, খুরুলে পেঁচা, মেঘ হও মাছরাঙা, ইউরেশীও-কণ্ঠী ঘুঘু, তিলা ঘুঘু, বাংলা কাঠ-ঠোকরা, বেনে বউ, বুলবুলি, টুনটুনি, লম্বা লেজ রাতচরা ইত্যাদি বর্তমানে দেখা যায়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য:

সারি সারি আকাশ ছোঁয়া শাল গাছের সবুজ আচ্ছাদন পর্যটকদের দূর থেকেই আকর্ষণ করে। পূর্ণনভা নদী এই জঙ্গলের সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নদীর কুলকুল ধ্বনি ও শীতল জলধারা যেকোনো ক্লান্ত পর্যটককে শান্ত করে দেয়। নদীর তীরে আদিবাসী সাঁওতালদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করা যায়।

পর্যটকদের আকর্ষণ:

সিংড়া জঙ্গল প্রতিবছর শীত মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও পরিবার-পরিজনেরা এখানে বনভোজন, ট্যুর ও পিকনিকের জন্য আসেন।

সেরা সময়:

শীতকাল: বনভোজন উৎসবের জন্য আদর্শ সময়।

বর্ষাকাল: সবুজের সমারোহ ও নদীর উচ্চলতা উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত।

সিংড়া জঙ্গল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও গ্রামীন জীবনযাত্রা একত্রিত হয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও চ্যালেঞ্জ

বিগত কয়েক দশকে সিংড়া জঙ্গলের ওপর বিভিন্ন হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, যেমন অরণ্য উজাড়, বৃক্ষনিধন, এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস। তবে, সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বন সংরক্ষণের কাজ চলছে। পরিবেশ রক্ষায় সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ ও স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে এই প্রাকৃতিক সম্পদ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত থাকে।

উপসংহার

দিনাজপুরের সিংড়া জঙ্গল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব একে অনন্য করে তুলেছে। পর্যটন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয় জনগণের জীবিকা নির্বাহের একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে, যাতে সিংড়া জঙ্গলের এই ঐশ্বর্য অক্ষুণ্ণ থাকে এবং ভবিষ্যতেও সকলকে মুগ্ধ করতে পারে।

 

দিনাজপুর সম্পর্কে আরোও জানুন->>>

দিনাজপুর জেলার ইতিহাস

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদ

দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবন

দিনাজপুর লিচু বাগান: বাংলাদেশের লিচুর স্বর্গ

 

দিনাজপুর এর আরোও কিছু জানুন এখানেঃ

দিনাজপুরের কবি সাহিত্যিকদের তালিকা